( ১৩ই জানুয়ারী কোলকাতা প্রাইম টাইমে প্রকাশিত )

রহস্যময় অ্যামাজনের প্রতি আমাদের কৌতূহল বরাবরের। ছোটবেলা শুকতারা বা আনন্দমেলায় অ্যামাজনের গাছ বা কোনো রহস্যময় গল্প দেখলেই হামলে পড়তাম সেগুলো পড়বার জন্য। লক্ষ্য লক্ষ্য বছর ধরে একইভাবে গাছ গুলো দাঁড়িয়ে থেকে নিজের নিয়মে সূর্য্যের আলো মাটি অব্দি পৌঁছাতে দেয় না তেমনি মানব জীবনের ক্রমাগত বিবর্তনের আঁচটুকু সেইখানে সেইখানে পৌঁছেছে কি না তা সঠিক ভাবে জানা নেই। ২৫ ফুট লম্বা অ্যানাকোন্ডা থেকে শুরু করে মানুষখেকো পিরানহা মাছ সবার গল্প পড়ে গা শিউরে ওঠে।
এমনি নানা বিস্ময়কর বস্তুর জানবার আগ্রহে যখন ইন্টারনেট ঘাঁটছি তখন চোখে পড়লো একটি রহস্যময় নদী যার নাম ‘শানায় টিপ্পিসখা। ‘ আর পাঁচখানা নদী থেকে এই নদী এক্কেবারে আলাদা। অ্যামাজনের গভীর অরণ্যের ভিতর দিয়ে বয়ে চলা এই নদী কিন্তু কোনো সাধারণ নদী নয়। এটি পৃথিবীর উষ্ণতম নদী।


অ্যামাজন অরণ্যের মাঝ বরাবর বয়ে চলা এই নদীর জল প্রচন্ড গরম। সর্বক্ষণ টগবগ করে ফুটছে। মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণী বা উদ্ভিদ, কিছুরই অস্তিত্ব নেই এই নদীতে। ৪ মাইল বা ৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৫ মিটার চওড়া ও ৬ মিটার গভীর নদী এই আমাজনের ‘শানায় টিম্পিসখা’। এখানকার নদীর জলের স্ফুটনাঙ্ক ৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মরণ নদীটি আবিষ্কার করেছিলেন স্প্যানিশের এক ভূ-বিজ্ঞানী ,আন্দ্রে রুজো। উনি ওনার দাদুর কাছে এই নদীর কথা শুনেছিলেন।

শানায় টিপ্পিসখা নদীর পৌরাণিক ইতিহাস

দক্ষিণ আমেরিকার পেরু দেশের আমাজন অরণ্যে বইছে ‘শানায় টিম্পিসখা’। পৌরাণিক গল্প কথা অনুযায়ী এই অঞ্চলে এককালে বাস করত ‘ইনকা জনজাতি’। ইনকাদের কাছে এই নদী ছিল সূর্যদেবের জলস্রোত। সূর্যের তাপেই ফুটছে নদীর জল, এমনটাই বিশ্বাস ছিল প্রাচীন এই জনজাতির। ইনকারা ছিল সূর্য দেবের উপাসক। নিজেদের কথ্য ভাষায় তারাই এই নদীর নাম রেখেছিল ‘শানায় টিম্পিসখা’। শুধু তাই নয়, স্পেনীয় বাহিনী, যাঁরা ইনকা সভ্যতা জয় করার জন্য অভিযানে সামিল হয়েছিলেন, তাঁদের বিবরণেও আছে এই নদীর কথা।
আর পাঁচ জনের মতো আন্দ্রে রুজোও এই ফুটন্ত নদী সম্পর্কে প্রচলিত লোককথা শুনেই বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেন নি। তাঁর মতে,নদীর জল ফুটন্ত হতে হলে অবশ্যই এর কাছাকাছি কোনো আগ্নেয়গিরি থাকতে হবে। তাপের উৎস না থাকলে জল গরম হবার সুযোগ নেই। মজারব্যাপার হলো যে , আমাজনের আশেপাশে কোথাও আগ্নেয়গিরি নেই। আমাজনের শানায় টিম্পিসখা নদী থেকে নিকটবর্তী সক্রিয় আগ্নেয়গিরির দূরত্ব ৪০০ কিমি। তা ছাড়া পেরুর আমাজনে কোনও চৌম্বকীয় ক্ষেত্রও নেই। তাহলে নদীর জল গরম কি করে হয় ?
ফুটন্ত নদীর রহস্য বার করতে গিয়ে আন্দ্রে রুজো তৈরি করেন পেরুর থার্মাল-ম্যাপ বা তাপমানচিত্র। পেরু জুড়ে বিস্তৃত জিয়ো থার্মাল বৈশিষ্ট তাঁকে বিস্মিত করে।ধীরে ধীরে আন্দ্রে বুঝতে পারেন ফুটন্ত নদীর অস্তিত্ব আছে।এরপর নিজের চোখে রহস্যভেদ করতে ২০১১-র নভেম্বরে পেরুর মধ্য অংশে অভিযানে যান আন্দ্রে রুজো।

আন্দ্রে রুজো

কেন ফুটছে অ্যামাজনের নদী?

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে রুজো পৌঁছলেন সেই রহস্যময় মরণ নদীর কাছে। দেখলেন,চার মাইল লম্বা ও ধোঁয়া উঠতে থাকা নদী ও নদীর জলে পড়ে রয়েছে নানা রকম পশুপাখির মৃতদেহ। নদীর কাছেই মায়ানটুয়াকু গ্রাম। সেই গ্রামের পুরোহিতরা এই নদীর জল ব্যবহার করেন ওষধি হিসেবে এবং তাঁরা এই নদীর এই নদীর হদিশ গোপন রাখাই পছন্দ করেন। রুজো নদীর জলে হাত দিতেই উষ্ণতা অনুভব করলেন। উনি গবেষণা করে আবিষ্কার করলেন , সূর্যদেবের তাপে নদীর জল ফুটছে না , ফুটছে পৃথিবীর ভূভাগের অভ্যন্তরস্থ তাপে। উষ্ণ প্রস্রবণের মতো নিজের খেয়ালেই শানায় টিপ্পিসখা বেরিয়েছে পাথরের চাঁইয়ের ফাঁক দিয়ে। তারপর নিজের যাত্রাপথ শেষ করে সে একসময় মিশে গিয়েছে অ্যামাজন নদীর সঙ্গে। আন্দ্রে দেখতে পান, ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত সেই স্রোত বেয়ে ভেসে চলেছে প্রাণীদের ঝলসে যাওয়া দেহ। যা সবথেকে বীভৎস, তা হল মৃত প্রাণীগুলির গলে সাদা হয়ে যাওয়া চোখ।
সম্প্রতি একটি গণ মাধ্যমে রুজো জানিয়েছিলেন, নদীর জল স্পর্শমাত্রই উনি বুঝেছিলেন এটি প্রাকৃতিক মৃত্যুফাঁদ। একটি মরা ব্যাঙকে নদীর জলে চুবিয়ে দেখলেন মাত্র একমিনিট সময়ে সেটি সেদ্ধ হয়ে গেলো।

ব্যাঙ সেদ্ধ


পৃথিবীতে আরো ফুটন্ত নদী আছে কিন্তু সেগুলোর কাছাকাছি আগ্নেয়গিরি বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র আছে যা এই শানায় টিপ্পিসখার কাছাকাছি নেই। তাই তিনি এই নদীকে অ্যামাজনের রহস্যময় নদী বলেই আখ্যা দিয়েছেন।
– ছবি গুগল থেকে নেয়া।
অজন্তাপ্রবাহিতা

বি : দ্রঃ : ফুটন্ত নদী শানায় টিম্পিসখা সম্পর্কে নিজের সমস্ত গবেষণা এবং অভিজ্ঞতা আন্দ্রে রুজো লিখে রেখেছেন তাঁর ‘দ্য বয়েলিং রিভার: অ্যাডভেঞ্চার অ্যান্ড ডিসকভারি ইন অ্যামাজন’ নামক গ্রন্থে।
তথ্য – ইন্টারনেট

By AjantaPrabahita

Every Story I create creats me.I am determined to be careful and happy in whatever situation I may find myself. I have learned to restore myself.I trust people with my heart, even if it will get broken I am proud of everything that I am and will become. ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *