মহিলাদের ‘মুড সুইং’ বা আবেগ,উদ্বেগ নিয়ে কাগজে, ফেসবুকে বা আরো অন্যান্য মাধ্যমে অনেক আলোচনা করা হয়ে থাকে। কখনো পুরুষের আবেগ বা ওদের ‘মুড সুইং’ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা সচরাচর চোখে পড়ে না।
“ভাল্লাগে না”, এখন “ভালো লাগছে না ” , “একটু নিজের মতো থাকতে দাও”, ” উফফ ! বিরক্ত করো না “, “এখন কথা বোলো না। ” এই কথা গুলো আমরা প্রায়ই পুরুষদের মুখে শুনতে পাই। শোনার পরে প্রচন্ড অভিমান হয় ,মন খারাপ করে , বিরক্ত হই ,কান্নাকাটি করি ,কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছি কি , সম্মুখের মানুষটা কেন এমন কথা বলছে ? এধরণের পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা অহরহই হয়ে থাকি। আমরা বুঝতেই পারি না ,যে মানুষটা কিছু মুহূর্ত আগে হেসে কথা বলছিলো ,হঠাৎ কেন এমন ব্যবহার করছে ?
যখন এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরঘুর করে তখন কার কথা মনে পড়ে ?
গুগল মাসী !!!!?
এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তো সবজান্তা গুগল মাসীর বাড়ি গেছিলাম। যদিও গুগল মাসীর সব কথা যে ধ্রুব-সত্য তা কিন্তু নয় , তাও মাসীর কাছে প্রশ্ন করে যা উত্তর পেলাম তা দিয়ে যদি আশেপাশের পুরুষ মানুষগুলোকে বুঝতে সুবিধে হয় তাহলে ক্ষতি কি ?
তাহলে সবার আগে বুঝতে চেষ্টা করি , মুড সুইং কাকে বলে মাসী ?
** কোনো কারণ ছাড়া মেজাজের নাটকীয় পরিবর্তন হওয়াকে ‘মুড সুইং’ বলা হয়।

  • মুড সুইং কেন হয় ?
    ** বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালের মতে ,হরমোনের প্রভাব , পুষ্টিহীনতা ,আয়রণ,ভিটামিন ও খনিজের অভাবে মেজাজের দ্রুত ওঠা নামায় মুড সুইং হয়।
  • মুড সুইং কি নারী পুরুষ উভয়েরই হয়ে থাকে ?
    ** হ্যা। লাইফস্টাইল , মানসিক চাপ ,ফুড হ্যাবিট ইত্যাদির কারণে মুড সুইং হয়ে থাকে।
  • কোন বয়স থেকে মুড সুইং বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা যায় ?
    ** কৈশোরে বা টিন এজে ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এই সময়ে দেহের হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এই সময়ে ছেলে মেয়ে দুজনেই অধিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। মেয়েরা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কারণে বিশেষ ভাবে ‘মুড-সুইং’ অনুভব করে থাকেন।
  • মাসী !! মুড-সুইংয়ের প্রধান কারণ তাহলে হরমোন। হরমোন কাকে বলে ?
    ** হরমোন শব্দের অর্থ হলো ‘প্রাণরস’। এই প্রাণরস আমাদের শরীরে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলেই আমরা প্রাণবন্ত থাকি এবং শরীরে হরমোনের নিয়ন্ত্রনেই আমরা যে বেঁচে আছি সেকথা অনুভব করতে পারি।
  • হরমোনের কাজ কি ?
    ** মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অব্দি হরমোন কাজ করে। হরমোনের প্রভাবেই একটা স্পার্ম ও একটা ওভামের মিলনে মানুষের জন্ম হয়। জন্মের পড়ে তার বৃদ্ধি ও বিকাশ ,পুরোটাই হরমোনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যখন হরমোন গুলো ফেল করে তখন একজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
  • নারী ও পুরুষের শরীরে কি একই ধরণের হরমোন থাকে ?
    ** মূলত ,’টেস্টোস্টেরোনকে পুরুষ হরমোন’ ও ‘এস্ট্রোজেনকে মহিলা হরমোন’ বলা হলেও উভয়ের শরীরেই এই দুই হরমোন বিদ্যমান। মহিলাদের শরীরে টেস্টস্টেরোনের মাত্রা পুরুষের তুলনায় দশ গুণ কম। নারীদের তুলনায় পুরুষের এস্ট্রোজেন খুব কম।
  • মুড সুইংয়ের সাধারণ কারণ গুলো কি কি ?
    ** একদম বেসিক মুড সুইংয়ের কারণ যে গুলো আমরা সবাই জানি,
    ১) স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
    ২) অস্থিরতা
    ৩) ডিপ্রেশন
    ৪) কাজের চাপ
    ৫) ঘুমের অভাব
    ৬) অতিরিক্ত কফি পান
    ৭) মাত্রাতিরিক্ত আলকোহল
    ৮) বাইপোলার ডিস্অর্ডার এর ফলে মুড সুইং হতে পারে।
  • মহিলাদের মুড সুইংয়ের কারণ গুলো মোটামুটি আমরা সবাই জানি। পুরুষের মুড সুইং হয় কেনো ?
    ** প্রধানত দুটো কারণে পুরুষের মুড সুইং হয়ে থাকে- প্রথমত , হরমোনাল পরিবর্তন যাকে Irritable Male Syndrome ( IMS) বলা হয়ে থাকে। দিনের বিভিন্ন সময়ে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের তারতম্যে পুরুষদের ব্যবহারে প্রচুর প্রভাব ফেলে।
    দ্বিতীয় কারণ – আগেই বলেছি যে পুরুষের শরীরেও ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন স্বল্প মাত্রায় থাকে। কোনো কারণে এই হরমোনের মাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন পুরুষ মানুষ বিরক্তি অনুভব করেন ও মুড সুইং হয়।
    এই দুটো কারণ ছাড়া ,বয়স বৃদ্ধি , মানসিক চাপ , শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, ফুড হ্যাবিট , ওজনের পরিবর্তন ,পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ইত্যাদি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ ও মুড সুইংয়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
  • মহিলাদের পিরিয়ডের সাথে মুড সুইংয়ের একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে কিন্তু পুরুষদের ব্যাপারে কি তা হতে পারে ? পুরুষের তো পিরিয়ড হয় না।
    ** পুরুষদের ডিরেক্টলি কোনো পিরিয়ড হয় না। তবে রেগুলার বেসিসে হরমোনাল চেঞ্জের জন্য ইমোশনাল ব্রেক ডাউন হয়ে থাকে। এই হরমোনাল পরিবর্তন পুরুষ শরীরে এমন কিছু লক্ষণ তৈরী করে যা মেয়েদের পিরিয়ডের সময়কার লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়। একেই Irritable Male Syndrome বলা হয়।
    পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন এক ঘন্টায় ৪/৫ বার বাড়তে কমতে পারে। ভোরবেলায় এই হরমোন সর্বোচ্চ মাত্রায় বৃদ্ধি পায় আবার সন্ধের দিকে এটি কমতে থাকে। সিজনের ওপরেও ভিত্তি করে এই হরমোন বাড়ে ও কমে। নভেম্বরের দিকে এটি সর্বোচ্চ এবং এপ্রিলের দিকে সর্বনিম্ন। এই হরমোন কেবলমাত্র প্রজনন কাজের জন্য যুক্ত এমন নয় বরং আরো আবেগীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
  • মাসী !! কোন কোন ফ্যাক্টর পুরুষ হরমোনের পরিবর্তনের জন্য দায়ী ?
    ১) বয়স – ৩৫ -৪০ বছরের মধ্যে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমতে শুরু করে। যাকে ‘মেইল মেনোপজও’ বলা হয়ে থাকে। এই হরমোন কমার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের মেজাজ ও খিটখিটানি বাড়তে শুরু করে।
    ২) স্ট্রেস লেভেল – স্ট্রেস লেভেল যত বাড়ে টেস্টোস্টেরন হরমোন তত কমে।এর ফলেই পরিবারে অনাকাঙ্খিত ঝামেলা বেশি বাড়ে। এই স্ট্রেস ও টেস্টোস্টেরন হরমোন ম্যানেজমেন্টের জন্য রাজকুমার রাওয়ের ‘মেড ইন চাইনা’ ছবিটি বিশেষ ভাবে রেকমেন্ডেড।
  • এই সমস্যা থেকে বাঁচতে গেলে কি করা উচিত ?
    ** নিজের আবেগ, অনুভূতি ও আচরণের দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করা উচিত। মুড সুইং কাটিয়ে তোলার জন্য মেডিটেশনের অভ্যাস করতে হবে।
    ** দিনে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোতে পারলে খুব ভালো।
    ** পর্যাপ্ত পরিমানে জল পান করতে হবে।
    ** ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় অতিরিক্ত পান করা যাবে না।
    ** প্রতিদিন অন্তত কুড়ি মিনিট ব্যায়াম অভ্যাস করে ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখতে হবে।
    ** দিনে ব্যালান্স ডায়েটের দিকে নজর দেয়া অতি আবশ্যক।
    ** সঙ্গীত আমাদের মনকে বিশেষ ভাবে রিলাক্স করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের সময় হিলিং মিউজিক অনেক আরাম দেয়।
    ** সম মানসিকতার বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি সময় কাটালেও মানসিক চাপ অনেক কম হয়।
    ~ ধন্যবাদ গুগল মাসী।
    আজকের ‘মুড সুইং’ নিয়ে লেখাটির উদ্দেশ্য সচেতনতা তৈরী করা। নারী ও পুরুষ একে ওপরের পরিপূরক। সবার সাথেই যেন আমাদের আন্তরিকতা ও সমমর্মিতা বজায় থাকে। দিনের শেষে সবাই শান্তিতে ঘুমোতে চায়। অকারণ অশান্তি কারই বা ভালো লাগে ?
    জীবন একটাই। Art of living এর সঙ্গে সঙ্গে Art of dying ও শেখা দরকার।

By AjantaPrabahita

Every Story I create creats me.I am determined to be careful and happy in whatever situation I may find myself. I have learned to restore myself.I trust people with my heart, even if it will get broken I am proud of everything that I am and will become. ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *